মঙ্গলবার, ২৮ এপ্রিল, ২০০৯

www.7dinerkagaj.com








সিলেটের পর্যটন এলাকাসমূহ
১. হজরত শাহ জালাল রহমত উল্লাহের মাযার
হজরত শাহজালাল (রঃ) এর মাযার সিলেট শহরে খ্যাতনামা স্হান। আজ থেকে ৬০০ বছরের বেশি আগে তিনি মারা গিয়েছেন। তবুও মাযার জিয়ারত করার জন্য অনেক দূর থেকে অসংখ্য ভক্ত বিভিন্ন স্হান থেকে এখানে আসেন । ইতিহাসবিদগণের মতে তিনি ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে দিল্লী হতে এখানে এসেছিলেন ও হিন্দু রাজা গৌর গোবিন্দকে পরাজিত করে সিলেট-এ স্হায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন।



মাধবকুন্ড জলপ্রপাত
মাধবকুন্ড দক্ষিণবাগ রেল ষ্টেশন হতে ৩ কিলোমিটার দুরে মাধবকুন্ড জলপ্রপাত যেখানে প্রতি বছর অনেক দর্শনার্থী আসেন। মাধবকুন্ডের ঝর্ণা হচ্ছে পর্যটকদের জন্য সিলেট বিভাগের মধ্যে একমাত্র আকর্ষণীয় স্হান। অসংখ্য পর্যটক ও বনভোজনকারীরা এখানকার সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে প্রতি দিন আসেন।
যেভাবে আসবেন:
বাস যোগে কুলাউড়া রেলষ্টেশন হতে মাধবকুন্ডে আসতে হলে ১ ঘন্টায় আসা যায়। ভ্রমণের সময় আশপাশে সবুজ চা বাগানের দৃশ্য চোখে পড়বে। পাহাড়ের ঝিকঝাক রোড আপনার ভ্রমণকে আরও আনন্দদায়ক করবে। মাধবকুন্ডে একটি বড় পাহাড়ী প্রাকৃতিক ঝর্ণা আছে। ২০০ ফুট হতে লক্ষ লক্ষ টন পানি নীচের দিকে পড়তে থাকে। পাথরের বড় বড় স্তুপ ও কালো পাথরগুলো মাধবকুন্ডকে সুন্দর আকৃতি দিয়েছে। এখানে পর্যটন মোটেলের সাথে থাকা ও খাওয়ার সুবিধা দেয়ার জন্য একটি রেস্টুরেন্ট আছে। রাতকাটানোর জন্য একটি জেলা বাংলোও আছে । জঙ্গলের মধ্যে অবস্হান আপনাকে অতিরিক্ত আনন্দ দিতে পারে। জেলা বাংলো বুকিং দেয়ার জন্য আপনাকে মৌলভীবাজার জেলা পরিষদ অফিসে যোগযোগ করতে হবে।
৩. শ্রীমঙ্গল
শ্রীমঙ্গল বাংলাদেশের "চা রাজধানী" নামে খ্যাত।
যা যা দেখবেন:
শ্রীমঙ্গলে বিশ্বের সর্ববৃহৎ চা বাগান আছে যা সবুজ কার্পেট নামে খ্যাত। এখানে চা গবেষণা কেন্দ্র ও একটি চা উৎপাদনের কারখানা আছে। প্রতি বছর বাংলাদেশের উৎপাদিত মানসম্মত চায়ের একটি বিরাট অংশ বিদেশে রপ্তানী হয়ে থাকে। শ্রীমঙ্গলে অধিকাংশ জায়গা জুড়েই চা বাগান চোখে পড়বে। যদি আপনি চা বাগানে থাকার ব্যবস্হা করতে পারেন তাহলে সে ভ্রমণটি আপনার স্মৃতিময় হয়ে থাকবে। শ্রীমঙ্গলের রেস্ট হাউজ অথবা অন্যান্য অনেক জায়গা আছে থাকার জন্য। তবে এখানে থাকার জন্য আগে থেকে বাগানের মালিক কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হয়।
৪. চৈতন্য দেবের মন্দির
শ্রী চৈতন্য দেবের মন্দির সিলেট শহর হতে ৪৫ কিলোমিটার উত্তর পূর্ব দিকে অবস্হিত। প্রায় ৫০০ বছরের পুরাতন এ শ্রী চৈতন্যের মন্দিরটি। প্রতি বছর বাংলা ফাল্গুন মাসে পূর্ণিমা রাতে এখানে একটি মেলার আয়োজন হয়ে থাকে যেখানে হাজার হাজার দেশী বিদেশী ভক্ত মেলাটি উপভোগ করেন।
৫. শাহী ঈদগাঁহ
১৭ শতাব্দীতে মোঘল সম্রাট আওরঙ্গজেব একটি পাহাড়ের উপরে সার্কিট হাউজের দক্ষিণ পূর্বে তিন কিলোমিটার দূরে শাহী ঈদগাঁহ নির্মাণ করেছিলেন। এটি দেখতে দূর্গের মত মনে হলেও প্রকৃতপক্ষে মুসলিম সম্প্রদায়ের দুটি বড় ঈদের জামাত এখানে আয়োজন করা হয়ে থাকে।
৬. গৌর গোবিন্দের দূর্গ
একটি সৌন্দর্যময় পাহাড়ের চূড়ায় মুরারিরচাঁদ সরকারী কলেজটি অবস্হিত যার দক্ষিণ পশ্চিম দিকে রাজা গৌর গোবিন্দ দূগর্টি রয়েছে। এটিও একটি দর্শণীয় স্হান।
৭. জৈন্তাপুর রাজবাড়ি
জন্তাপুর সিলেট শহর হতে ৪৩ কিলোমিটার দূরে সিলেট শিলং রোডের পাশে অবস্হিত। প্রাচীন রাজার রাজধানী নামে খ্যাত এ জৈন্তাপুর। এখানে খাশিয়া ও জৈন্তা পাহাড় ও জৈন্তা ভূমি আছে। জৈন্তাপুরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এ রাজার রাজত্বের নিদর্শনগুলো । জৈন্তাপুর বন এবং জাফলং এলাকার আশেপাশে, শ্রীপুর এবং তামাবিল এলাকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে প্রচুর লোকজন এখানে আসে । যদি আপনি জাফলং-এ ভ্রমণের পরিকল্পনা করেন তাহলে জাফলং-এ সারাদিন বেড়িয়ে সন্ধ্যায় সিলেট শহরে ফিরে যেতে হবে। সাধারণত: শীতকালে জাফলং ভ্রমণের উপযুক্ত সময় তবে পাহাড়ী ঝর্ণা উপভোগ করতে চাঁদনী রাতে আসা উচিত। জৈন্তাপুর রাজবাড়ি জাফলং হতে ৫ কিলোমিটার দূরে, এখানে একটি সুন্দর চা বাগান আছে। সিলেট শহরের দক্ষিণ পশ্চিমে ৩৫ কিলোমিটার দূরে এটি অবস্হিত। শ্রীপুর ভ্রমণের পর জৈন্তাপুরের জৈন্তা রাজপ্রাসাদ পরিদর্শন করতে ভুলবেন না। ১৮ শতকে জৈন্তা রাজার রাজধানী ছিল এ জৈন্তাপুর। জৈন্তা রাজাবাড়ি হচ্ছে জৈন্তা রাজার রাজপ্রাসাদ। এটি জৈন্তাপুর বাজারের কাছে। এ রাজপ্রাসাদটি বর্তমানে ধ্বংসের পথে তবুও অনেক পর্যটক জৈন্তা রাজার অস্তিত্বতের নিদর্শন দেখতে আসে।
৮. শ্রীপুর
শ্রীপুর হচ্ছে অন্য একটি পর্যটন স্হান যেখানে আপনি পাহাড়ী ঝর্ণা থেকে পানি পড়ার শব্দ শুনতে পাবেন। এ এলাকার বর্ধিত অংশে ভারতীয় সীমানার ঝর্ণাটি আপনার দৃষ্টিতে আসবে। মাঝেমাঝে বড় বড় পাথর এ ঝর্ণার সাথে শ্রীপুরে আসে। জাফলং এবং তামাবিল ভ্রমণের পর সিলেটে ফেরার পথে শ্রীপুর ভ্রমণ করতে পারেন। জাফলং থেকে শ্রীপুরের দূরত্ব ৭ থেকে ৮ কিলোমিটার।



৯. লাউয়াছড়া বন
“লাউয়াছড়া রেইন ফরেস্ট” বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ বন। পর্যটকরা এখানে বানরের গাছে চড়ার দৃশ্য, পাখি যেমন- পেঁচা, টিয়া ইত্যাদি দেখতে পাবেন। এখানে হরিণের ঘোরাফেরা, চিতাবাঘ, বন্যমোরগ, কাঠবিড়ালী এবং অজগর সাপ দেখতে পাবেন। যারা পাখি দেখতে ভালোবাসে তারা কোনভাবে এটা দেখতে ভুলবেননা। এশিয়ার মধ্যে বিরল ক্লোরোফোর্মের গাছ রয়েছে এখানে যা সত্যিই আকর্ষণীয়। এখানে খাসিয়া ও মুণিপুরী দু’জাতির উপজাতিদের বসবাস । মুণিপুরীদের আকর্ষণীয় নাচ ও গান এখানকার আকর্ষণ অনেকটা বৃদ্ধি করেছে। তাদের একটি ঐতিহ্য হচ্ছে কাপড় বোনা। আপনি এখান থেকে হস্তশিল্প, উলের তৈরি শাল, শাড়ী, নেপকিন, বিছানার চাদর এবং কিছু ব্যাগও কিনতে পারেন। খাসিয়া উপজাতিদের গ্রামগুলো পাহাড়ের উঁচুতে ও গভীর বনের মধ্যে যা শহর থেকে অনেক দূরে। লাউয়াছড়া বনকে বলা হয়ে থাকে স্বর্গের রাজ্য যা আপনাকে এক ধরণের প্রশান্তি এনে দিবে।
১০. জাফলং
জাফলং সিলেট বিভাগের অন্যতম আকর্ষণীয় স্হান। সিলেট শহর হতে এটি ৬০ কিলোমিটার দূরে অবস্হিত ও সিলেট শহর হতে দেড়ঘন্টা সময় নিবে এখানে পৌঁছাতে। জাফলং-এর দর্শনীয় দিক হচ্ছে চা বাগান ও পাহাড় থেকে পাথর আহরণ। মারি নদী ও কাশিয়া পাহাড়ের পাদদেশে জাফলং অবস্হিত। মারি নদীর উৎপত্তি হিমালয় থেকে। এর স্রোতে লক্ষ লক্ষ টন পাথর চলে আসে। মারি নদীতে ভ্রমণের মাধ্যমে পাথর সংগ্রহের দৃশ্য আপনাকে সত্যিই আনন্দ দিবে। জাফলং হচ্ছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য সমৃদ্ধ সম্পূর্ণ পাহাড়ী এলাকা যা সবুজ পাহাড়ের অরণ্যে ঘেরা। এখানে প্রচুর বন্য প্রাণীর বসবাস। বনের কাছাকাছি আসলে আপনাকে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। আপনি জাফলং- এ আসলে খাসিয়া উপজাতিদের জীবন ও জীবিকা চোখে পড়বে। জাফলং- এ আসতে হলে সিলেট থেকে আপনাকে সকাল সকাল যাত্রা করতে হবে যাতে ভ্রমণ শেষে সন্ধ্যার আগে সিলেট ফিরতে পারেন।
১১. তামাবিল স্হলবন্দর
জাফলং হতে অর্ধেক কিলোমিটার দূরে হচ্ছে তামাবিল যা ভারত সীমান্তের নিকটে অবস্হিত। যদি আপনি ভারতের শিলং ভ্রমণ করতে চান তাহলে কাষ্টমস-এর নিয়মকানুন সেরে সীমানা পাড় হয়ে সেখানে যেতে পারেন। ভারতে যেতে হলে আপনাকে সেখানকার ভিসার মেয়াদ থাকতে হবে। সিলেট শহর হতে তামাবিল সীমানা ৫৫ কিলোমিটার দূরে অবস্হিত। এ এলাকার দর্শনীয় স্হান ও ঝর্ণার উৎস দেখতে হলে তামাবিল দিয়ে বর্ডার পার হতে হবে ।
১২. সুরমা ভেলী
সুরমা ভেলীর দুই দিকে পাহাড় পর্বতের মধ্যে বিস্তীর্ণ এলাকার মাঝখানে চা রোপণের দৃশ্য ও সবুজ বন সত্যিই মনকে মুগ্ধ করবে। বাংলাদেশের পর্যটন স্হানগুলোর মধ্যে অন্যতম আকর্ষণ খাসিয়া, জৈন্তা ও ত্রিপুরা পাহাড় এখানেই অবস্হিত। ঘন বন, মুণিপুরী উপজাতিদের বন্যজীবনের অনেক নিদর্শন এখানে দেখতে পাওয়া যায়। নীচু পাহাড়ে মাইলের পর মাইলের চা বাগানের বিস্তার একটি সবুজ কার্পেটের মত দেখা যায়। এটি পর্যটকদের একটি স্মরণীয় অভিজ্ঞতা হতে পারে। সিলেট হচ্ছে চা বাগানের একটি শস্যভান্ডার, এখানে ১৫০ টির উপরে চা বাগান আছে যার মধ্যে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় তিনটি চা বাগান এখানে অবস্হিত। সিলেটের আরেকটি দর্শনীয় স্হান হচ্ছে সুরমা ও কুশিয়ারা নদী যা উত্তর দক্ষিণে অবস্হিত। এখানে অনেক হাওড় আছে যা শীতের সময় সবুজ ভূমিকে আর প্রসারিত করে কিন্তু বর্ষার সময় অশান্ত সাগরে রূপ নেয়। শীতের সময় সাইবেরিয়া হতে এইসব হাওড়ে লক্ষ লক্ষ অতিথি পাখি আসে। যা সত্যিই দেখার মত।