সোমবার, ২৭ এপ্রিল, ২০০৯

MD.JOYNUL HAQUE

জীবজগতের একটা বিরাট অংশ গোটা পৃথিবী থেকেই খুব দ্রুত হারিয়ে যাচ্ছে। আমাদের দেশের বিপন্ন পশু-পাখির মধ্যে শামুকখোল অন্যতম। শামুকখোলের মত বড় পাখিদের জন্য বেশী খাবার দরকার আর সেই সাথে বাসা বানাবার জন্য চাই বেশ পুরাতন লম্বা গাছ যা বড় পাখিদের কাছে বেশ দুর্লভ হয়ে পড়েছে। এক সময় বাংলাদেশের সব জায়গায় শামুকখোল দেখা যেতো। এখন বাংলাদেশের কয়েকটি এলাকায় এর বড় বড় কলোনি দেখা যায়। এদের মধ্যে নাটরের পচামারিয়ায় প্রায় এক হাজারের মত একটি বড় কলোনিকে রাত কাটাতে দেখেছি। পচামারিয়া ছাড়াও রাজশাহীর দুর্গাপুর, নওগাঁর সান্তাহার, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেটের পাখিবাড়ি, শ্রীমঙ্গলের হাইল হাওড়ে আর কুলাউড়ার হাকালুকি হাওড়ে এদের দেখা পেয়েছি বেশ কয়েকবার। পাখি দেখিয়েদের মতে,সব মিলিয়ে আমাদের দেশে শামখোলের মোট সংখ্যা তিন হাজারের বেশী হবে না।সম্প্রতি জয়পুরহাট জেলার ক্ষেতলাল উপজেলার মাহাবাদপুরে গ্রামে গিয়ে শত শত শামুখোলের বাসা পাওয়া গেছে। মূল্যবান এ পাখি প্রজাতিটির একসাথে এত বাসা এদেশের আর কোথাও নেই। মাহাবাদপুরের সবুজ গ্রামে সাদা পাখির এ অপূর্ব মিলনমেলা যত্ন নিলেই কেবল এদেশে শামুকখোলের অস্তিত্ব টিকে রবে। এ গ্রামের দুটি পাড়ায় আস্তানা গেড়েছে পাখিগুলো। এর একটি হল সাকিদারপাড়া আর অন্যটি দক্ষিণপাড়া। দু’টি পাড়ায় মোট বাসার সংখ্যা ৩৫১টি। এর মধ্যে সাকিদারপাড়াতেই ১৭৯টি ও দক্ষিণপাড়ায় ১৭২টি। সাদিকারপাড়ায় মোট ২৭টি গাছে ও দক্ষিণপাড়ায় ১৬টি গাছে এই বাসাগুলো বেঁধেছে শামুকখোলের দল। এই গাছগুলো হল কদম, শিমুল, পিতরাজ, আমরা, সিন্দুর, কড়মজা, কড়ই,মাসগান্দা ইত্যাদি। সবচেয়ে বেশী বাসা বেঁধেছে উঁচু কদম গাছে। বাসা বাঁধার পর পাখিরা বহু সমস্যার সম্মুখীন। এরই মধ্যে প্রকৃতিক বিপর্যয়ে ১৫টি বাসা নষ্ট হয়ে গেছে। বহু বাসায় ডিমে তা দেওয়া শুরু করেছে পাখিরা। অনেক ডিম কাক ও চিলের অত্যাচারে নষ্ট হয়ে গেছে। দিনে দিনে শামুকখোল কমতে কমতে এদেশের ছোট্ট একটা জায়গায় আশ্রয় নিয়েছে। সেখানে মানুষের অত্যাচারও কম নেই। একদিনেই একজন লোক ৫টি ডিমসহ তিনটি বাসা ভেঙ্গে দিয়েছে। এভাবে প্রায়ই অনেকেই পাখির বাসা নষ্ট করছে। আর গাছকাটা তো খুবই সহজ ব্যাপার। গত মাসেই দু’টি কদম গাছ কাটা পড়েছে। শুধু শামকখোলই নয়, এ এলাকাটি কানিবগ ও বিভিন্ন বগারও নিরাপদ আবাস্থল। এ মাসে আরও দেখা গেছে ব্লাক হেডেড আইবিস যা এ দেশ থেকে হারিয়ে যাবার পথে। শত শত বাসা পাখির এ অভয়ারন্য রক্ষা করা খুবই জরুরি। কারণ গোটা পৃথিবীতে এখন মাত্র এক লক্ষ শামুকখোল টিকে আছে। বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, পাকিস্তান আর শ্রীলঙ্কাই তাদের শেষ আশ্রয়। তাও আবার ভারতের প্রজননভূমিতেও প্রচন্ড খরার জন্যে কোন কোন বছর শামুকখোলের প্রজনন বন্ধ থাকে। তাই শামুকখোলের বড়ই দুর্দিন আজ।শামুকখোলের ইংরিজি নাম ওপেন-বিল, যার অর্থ খোলাঠোঁট। শামুকখোলের বৈজ্ঞানিক নামটা আরো মজার: অ্যানাস্টোমাস অসিট্যান্স - যার মানে ’হাই-তোলা মুখ’। আমাদের দেশের শামুকখোলের পুরো নাম-এশিয়ান ওপেন বিল। বাংলায় মানুষ একে চিনে শামুকভাঙ্গা বা শামুকখোল বলে। একবার আংটি-পরানো এক শামুকখোল-ছানাকে থাইল্যান্ডে তার বাসা থেকে বিদায় হবার কয়েক দিনের মধ্যেই ১৫০০ কিমি দূরে বাংলাদেশে পাওয়া গেল। শামুকখোল সাধারণত: দূর-পাল্লার পরিব্রাজক নয়। তাই, ঐ ছানাটির বাংলাদেশ সফরের উদ্দেশ্য আজও ব্যাখ্যা করা যায়নি।এদেশে এ মূল্যবান প্রজাতি রক্ষার জন্য খুব দ্রুতই মাহাবাদপুরের বাসাগুলোকে বাঁচানো জুরুরি। শুধু ছোট্ট এ এলাকাটির মাত্র গাছেই ২০০১ সাল থেকে বাসা বেধে আসছে শামুকখোলের দল। এখন এর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। আসুন সবাই মিলে বিপন্ন এ প্রজাতিটি রক্ষা করি।