বুধবার, ২৯ এপ্রিল, ২০০৯

বাংলাদেশ

অপরূপ রূপ লাবণ্যে ভরা আমাদের এই বাংলাদেশ। আমাদের মধ্যে অধিকাংশ মানুষেরই বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অবলোকন করার সময় বা সুযোগ হয়নি। বহির্বিশ্বের অপ্রাকৃতিক ও জাঁকজমকপূর্ণ সৌন্দর্য অবলোকন করার চেষ্টাই বোধ হয় আমাদের অনেক বেশী। অথচ বাংলাদেশের এই আত্নার সাথে মিশে যাওয়া সৌন্দর্য আর কোথায় পাবেন আপনি ? বাংলাদেশে আপনার দেখা-অদেখা এমন বহু পরিমাণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কেন্দ্রস্থল রয়েছে যা আপনাকে উদাসীন করে দিতে পারে, আপনি পেতে পারেন এক অনাবিল মানসিক প্রশান্তি। বাংলাদেশের বহু সৌন্দর্যমন্ডিত স্থানের মধ্যে কিছু পরিমাণ স্থানের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেওয়া হল। সকল বিভাগীয় স্থান সমূহের এই তালিকা থেকে যেকোন স্থান নির্বাচন করে স্থানটি সম্পর্কে জেনে নিতে পারেন।
জাফলং
জাফলং এ যেতে হলে সর্ব প্রথম সিলেট আসতে হবে। ঢাকা হতে সিলেটের দূরত্ব ৩৪৬ কিমি। সিলেট শহর এর শিবগঞ্জ বাজার এলাকা হতে জাফলং এর কোষ্টার ছাড়ে ২০ মিনিট পর পর পৌছাতে সময় লাগে ২ ঘন্টা। সিলেট শহরকে পিছনে রেখে জাফলং এর উদ্দেশ্যে যাত্রার পথে রাস-ার দু’পাশে ছোট বড় বিচ্ছিন্ন টিলা চক্ষে পড়বে। এই দৃশ্য হরিপুর পর্যন- তারপর একটি হাওড় পার হয়ে জৈন-াপুর থেকে শুরু হলেঅ মাঝারী আকারের পাহাড় শ্রেনী । পাহাড় কেটে রাস-া তৈরী করা হয়েছে। পাহাড়ি পথ বেয়ে তামাবিল ইমিগ্রেশন বর্ডার রেখে চড়াই উৎরাই পার হয়ে জাফলং নদীতে। এই পথে অনেক ষ্টোন ক্রাশিং মেশিন চক্ষে পড়বে। প্রকৃতির অপরুপ লীলা ভুমি জাফলং এ ভ্রমনকারীদের চির স্মরনীয় হয়ে থাকবে। পাশেই হিমালয় পর্বতের অংশ খাশিয়া ও জয়নি-য়া পাহাড় শ্রেনী। ৪ হাজার ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট এই পাহাড়ের সৌন্দর্য অতুলনীয়। বর্ষাকালে এই পাহাড় সাদা মেঘের গালিচায় ঢেকে থাকে। সবুজের বুকচিরে পাহাড় থেকে নেমে আসা অসংখ্য ছোট বড় ঝর্নাধারা দেখে পর্যটকগন বিমোহিত হন। এই দৃশ্য বহু দূর থেকে উপভোগ করা যায়। আবার শীতের দিনের পরিস্কার আকাশে পাহাড়ের রুপ পাল্টে যায়। পাহাড় থেকে নেমে আসা জাফলং নদীর সৌন্দর্য তুলনাহীন। বরফ গলা ও বৃষ্টির স্বচ্ছ পানি হিমালয় পর্বত থেকে নেমে জাফলং নদী দিয়ে চলে যাচ্ছে। নদীতে অসংখ্য নারী ও পুরুষ শ্রমিক পাথর সংগ্রহ করার কাজে লিপ্ত। দূরের পাহাড়ের পাদদেশে ভারতের দেওকী বাজার এর দৃশ্যও ভাল লাগে। জাফলং এর অদূরে তামাবিল সিলেট রুটেই রয়েছে সুন্দর একটি পিকনিক স্পট যাহার নাম “শ্রীপুর পিকনিক সেন্টার”। পাহাড়ি এই স্পটে প্রতি বছর অসংখ্য পিকনিক পার্টির আগমন ঘটে থাকে। নভেম্বর হতে ফেব্রুয়ারী অর্থাৎ শীতকাল জাফলং ভ্রমনের জন্য আকর্ষনীয় হলে সারা বছরই এখানে পর্যটকদের আগমন ঘটে থাকে। তবে বর্ষাকাল এড়িয়ে যাওয়াই ভাল। সংগে ছাতাও রাখা বাঞ্চনীয় কারন জাফলং বৃষ্টি বহুল এলাকা। পৃথিবীর সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের স'ান আসামের চেরাপুঞ্জি এখান থেকে বেশী দূরে নয়।
মাধবকুন্ড জল প্রপাত
মানুষের জীবনের উস্পিত বস'টি হল শানি-। আর সেই শানি-র অফুরন- আধার ভ্রমনে। বাংলাদেশের উত্তর পূর্ব সীমানে- সিলেট বিভাগের মৌলভী বাজার জেলঅর বড়লেখা থানার অধীনে ১১বর্গ কিমি আয়তনের পাথারিয়া পাহাড়ের এক অংশে মাধবকুন্ড জলপ্রপাতটি অবসি'ত। মৌলভীবাজার হতে মাধবকুন্ডের দূরত্ব ৬৫কিমি. কুলাউড়া জংশণ হতে ৩২কিমি আর বড়লেখা হতে ১২কিমি। চা বাগান ও আঁকা বাঁকা পাহাড়ি রাস-া পেরিয়ে মাধব কুন্ডে প্রথমেই চক্ষে পড়বে জেলা পরিষদ এর রেষ্ট হাউজ। সামনে দিয়ে বায়ে গেছে কল কল ঘড়্গনিতে ঝর্না ধারা। দুই পাশেই সবুজ পাহাড় শ্রেনী। পাহাড়ের গা বেয়েই গওড় উঠেছে বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন এর ােমটেল ও সুন্দর রেসে-ারা। এখান থেকে পায়ে হাটা সংর্কীন পাহাড়ি রা্‌সতা ও টাড়াই উৎরাই পেরিয়ে াবমে শ্রী শ্রী মাধবেশ্বর মহাদেরবের মন্দির পথ চলে গেছে সোজা জল প্রপাতের দিকে। এখন থেকেই কানে আসাবে জল প্রপাতের শোঁ শোঁ শব্দ। সেই সংগে ঝিঝি পোকর ামাতল করা অবিরাম আওর্য়াপ। গা ছম ছম করা এই রোমাঞ্চকর পরিবেশ আপনার ভ্রমকে চির স্মরনীয় করে রাখবে। বিশাল কালো পাথুরে পাহাড়। এবই ামঝ থেকে ২০০ ফট উপর হতে নিচে সাজোরে আছড়ে পড়ছে অজ্‌স্র স্বচ্ছ জলধারা। এরই ফলে সৃষ্টি হয়েছে অজানা শব্দ তরঙ্গের সুর ও ঝংকার। নিচে কুন্ড সৃষ্টির কারনে শীতল বায়ুর পরশে কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয় বিরাজ করে। পাশেই কালে পাথরের পাহাড়ি গুহা। মাধব কুন্ড একদিকে যেন নৈসর্গিক সৌন্দর্য় মন্ডিত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের স'ান, অন্য দিকে তেমনি এটি হিন্দু তীর্থ স'ান হিসাবে প্রসিদ্ধ। প্রতি বছর ত্রৈের মধু কৃষ্ণা এয়োদশী তিথীতে গঙগা স্নান ও পিন্ডদান করা হয়। এই উপলক্ষে মাধব কুন্ডে হাজার হাজার পূন্যার্থীর সমাগম ঘঠে। মাধব কুন্ডে জল প্রপাত ছাড়াও এলাকার পাহাড়ী সৌন্দর্য কোন অংশে কম নয়। পাথরিয়া পাহাড়ের ৫টি শৃঙ্গ আছে। লঠিটিলা, ধুনাটিলা, দীরমিনটিলা, রাজবাড়ি ও নাগিনী টিলা। এখানকার শিব মন্দিরটির ইতিহাস অতি প্রাচীন ও বৈচিত্রময়। অতীতে বিভিন্ন সময়ে একের পর এক গৃহত্যাগী সন্ন্যাসী এখানে সাধনা করতে আসেন। তার মধ্যে পুরীবাবা নামক এক সাধক সন্ন্যাসী এখানে কমলা বাগান তৈরী করেন। মাধব কুন্ডের কমলার সুনাম রাজধানী ঢাকা সহ সারা দেশেই খ্যাতি লাব করে। মওসুমে মাধব কুন্ড বনভোজনকারীদের জন্য হয়ে ওঠে একটি আকর্ষনীয় স'ান। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের শ্রেষ্টত্বের কারনে এখানে অনেক সময় ছায়াছবির শুটিং ও হয়ে থাকে। এলাকায় স'ায়ী জন বসতি বলতে সিলেটের জৈন-া পাহাড় থেকে আগত খাসিয়া উপজাতীদের পল্লী ও তাদের শ্রমে গড়ে ওঠা পান পুঞ্জি। উপজাতীদের বৈচিত্রময় জীবন ব্যবস'ার সাথে পরিচিত হওয়া ও পর্যটকদের একটি বড় আকর্ষন। খাসিয়াদের মধ্যে মাতৃতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস'া প্রচলিত। খাসিয়াদের সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড, পরিধেয় বস্ত্র ও জীবন যাপন ব্যবস'ায় পর্যটকরা বৈচিত্র খুজে পান। মহিলারা শিশুদের কাপড়ের সংগে পিঠে ঝুলিয়ে সহজেই উচুনিচু পাহাড় পথ পাড়ি দিয়ে থাকে। পুরাতন শিবমন্দির থেকে দক্ষিন পাশে প্রায় ৪০০ফুট দূরে স্বরস্বতি নামক আর একটি জলপ্রপাত আছে। এই জল প্রপাতে প্রায় ১০০ ফুট উপর হতে খাড়া ভাবে জলরাশী অবিরাম নিচে আছড়ে পড়ছে। প্রায় ১০০ বছর পূর্বে মাধবকুন্ড হতে ২ কিমি দূরে তৈল উৎপাদন কেন্দ্র গড়ে উঠেছিল। মাধবকুন্ডের উপরের অংশে যেতে হলে পুরাতন শীব মন্দির থেকে সোজা দক্ষিন দিকে মাধবছড়া পাড়ি দিয়ে উচু টিলার গা বেয়ে খাড়াভাবে অনেক কষ্টের বিনিময়ে উপরে যেতে হবে। উপরের ছড়ায় সুদৃশ্য পাথরের সারির উপর দিয়ে জল প্রবাহিত হচ্ছে। পাশেই রয়েছে সুদৃশ্য বিরাট আকারের জোড়া পাথর। উক্ত জোড়া পাথর থেকে দক্ষিন পাশে ৫০০ ফুট উচুতে নার্গিনী টিলা অবসি'ত। প্রাচীন কাল হতে উক্ত টিলাতে বিষধর স্বার্পের বাস। এখানে প্রতি বছর জংলী হাতির দল হানা দেয়। এলাকার মানুষ জন খুবই সহজ সরল। নির্ভয়ে জঙ্গলে ঘোরা ফেরা করা থানার উপর দিয়ে।