হাসন রাজার সংক্ষিপ্ত জীবনী
ও হাসন রাজা যাদুঘরে রক্ষিত জিনিষ পত্রের কিছু ছবি
সুনামগঞ্জে এসেছি এক বছর পার হয়ে গেল। ইচ্ছা ছিল হাসন রাজা সম্পর্কে একটা পোষ্ট দিব। তাঁর সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পেরেছি এখানে আসার পর। তাঁর সংক্ষিপ্ত জীবনী ও হাসন রাজা যাদুঘরের কিছু ছবি সবার সাথে শেয়ার করলাম। (পোষ্টটি অনেক বড় হওয়ায় লোড হতে কিছু সময় নিতে পারে)নামঃ দেওয়ান হাসন রাজা চৌধুরীডাক নামঃ হাসন রাজাজন্ম তারিখঃ ৭ পৌষ ১২৬১ বাংলা (২১ ডিসেম্বর ১৮৫৪ খ্রিষ্টাব্দ)উচ্চতাঃ ৫ ফুট ১০ ইঞ্চি (১.৭৮ মিটার)জন্মস্থান/বসবাসঃ তেঘরিয়া (লক্ষণশ্রী), সুনামগঞ্জ (বৃহত্তর সিলেট)পৈত্রিক বাড়িঃ রামপাশা, বিশ্বনাথ, সিলেটমায়ের বাড়ি (নানার বাড়ি)ঃ খালিয়াজুড়ি, নেত্রকোনা (বৃহত্তর ময়মনসিংহ)পিতাঃ দেওয়ান আলী রাজা চৌধুরী (১২০৭-১২৭৬ বঙ্গাব্দ) (১৮০০-১৮৬৯ খ্রিঃ)মাতাঃ মোসাম্মত হুরমত জান বিবি (১২৩৫-১৩১০ বঙ্গাব্দ) (১৯২৮-১৯০৩ খ্রিঃ)ভাইঃ দেওয়ান ওবায়দুর রাজা চৌধুরী (১৮৩২-১৮৬৯), দেওয়ান মোজাফ্ফর রাজা চৌধুরী (১৮৫২-১৮৭৯)বোনঃ সহিফা বানু (১৮৫০-১৯১৭)শখঃ গান রচনা ও গানের আসর জমানো, গায়কি দল নিয়ে নৌকা ভ্রমণ, নৌকা বাইচ, ঘোড় দৌড়, কোড়া ও অন্যান্য পাখি শিকার ও পালন, হাতির সোয়ারী হওয়া এবং বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ। হাসন রাজার আর এক মজার শখ ছিল ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের জড়ো করে রুপোর টাকা ছড়িয়ে দেওয়া। বাচ্চারা যখন হুটোপুটি করে কুড়িয়ে নিত তা দেখে তিনি খুব মজা পেতেন।পড়াশুনাঃ বংশের নিয়মানুসারে তিনি প্রথমে আরবী এবং পরে বাংলা ভাষায় পাঠ শুরু করেন। হাসন রাজা যে যুগে জন্মেছিলেন সে যুগে মুসলমান সমাজে ইংরেজি শিক্ষার তত প্রচলন না থাকায় বিদ্যালয়ের পড়াশুনায় তিনি বেশিদুর অগ্রসর হতে পারেন নি। নিজে আধুনিক শিক্ষায় বেশি অগ্রসর হতে না পারলেও শিক্ষা প্রসারে তিনি উদার হাতে সাহায্য-সহযোগিতা প্রদান করতেন। সুনামগঞ্জের প্রধান ক’টি শীর্ষ প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠাকল্পে তাঁর অফুরন্ত দান ছিল। এর মধ্যে সুনামগঞ্জ জুবিলী হাই স্কুল ও কলেজ প্রতিষ্ঠার জন্য জায়গা প্রদান উল্লেখযোগ্য।হাসন রাজার শারীরিক ধরণঃ হাসন রাজা সত্যিকার অর্থে সুপুরুষ ছিলেন। তাঁর উচু দেহ, দীর্ঘ বাহু, ধারালো নাক এবং কোকড়ানো চুল প্রাচীন আর্যদের চেহারা স্মরণ করিয়ে দেয়।হাসন রাজার পোষাকের ধরণঃ সামগ্রিক ভাবে তাঁর পোষাক-পরিচ্ছদে ছিল আভিজ্যাত্যের পরিচয়। তিনি মখমলের চোগা, চাপকান ও জরির পাগড়ি ছাড়া বাইরে বের হতেন না। তাছাড়া লুঙ্গির মতো করে পেচিয়ে ধুতি ও হাতাওয়ালা গেঞ্জি নিয়মিত পরতেন।জমিদারিত্ব গ্রহণঃ ১২৭৬ বাংলা (১৮৬৯ খ্রিঃ) ১৫ বছর বয়সে যে বছরে হাসন রাজার বড় ভাই ও বাবা পরলোক গমন করেন।হাসন রাজার প্রথম রচিত বইঃ সৌখিন বাহার, রচনা কালঃ ১৮৬৫-১৮৬৯ খ্রিঃ), প্রকাশ কালঃ ১৯৩১ (প্রথম ছেলে গণিউর রাজা কর্তৃক)হাসন রাজার দ্বিতীয় রচিত বইঃ হাসন বাহার, রচনা কালঃ ১৮৭২-১৯১৪ খ্রিঃ, প্রথম প্রকাশঃ ১৯০৭ (হাসন রাজা কর্তৃক), দ্বিতীয় প্রকাশঃ ১৯২৪ খ্রিঃ, হাসন রাজার ছেলে খান বাহাদুর দওয়ান গণিউর রাজা কর্তৃক।গানের সংখ্যাঃ ৫৫৩। অনেকে অনুমান করেন হাসন রাজার গানের সংখ্যা হাজারেরও বেশী। জমিদারি এলাকাঃ সিলেট ও সুনামগঞ্জ উল্লেখযোগ্য পরগণা। (পরগণা= এখনকার তিন থেকে চারটি ইউনিয়নের সমান প্রায়)। লক্ষণশ্রী (বর্তমান সুনামগঞ্জ শহরে ও আশেপাশের কয়েকটি এলাকা), মহারাম, অচিন্ত-পুর, লাউড়, পাগলা, পলাশ, বেতাল, চামতলা, কৌড়িয়া, কুরুয়া ইত্যাদি পরগণা। দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফের মতে তিনি প্রায় ৫ লক্ষ ২৭ হাজার বিঘা জুড়ে জমির অধিকারী ছিলেন। জীবনের উল্লেখযোগ্য ঘটনাঃ ১৫ বছর বয়সে হাসন রাজা উনার বড় ভাই ও বাবাকে হারান যে বছরে তাঁরা দুজনই ৪০ দিনের ব্যবধানে ইহলোক ত্যাগ করেন। সেই সময় থেকেই উনার আধ্যাত্মিক সাধনা ও চিন্তাধারার সুত্রপাত ঘটে এবং সেই সাথে মরমী গান লেখার শুরু। ১৮৯৭ সালে আসাম ও সিলেট জুড়ে এক বিরাট ভূমিকম্পের আবির্ভাব ঘটে। অত্র এলাকায় এর ধ্বংশলীলার ব্যাপকতার রেকর্ড এ পর্যন্ত ছাড়িয়ে যায়নি। রিকটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৮.৮।হাসন দর্শন সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথঃ “পূর্ব বাংলার এই গ্রাম্য কবির মাঝে এমন একটি গভীর তত্ত্ব খুঁজে পাইঃ ব্যক্তি স্বরূপের সাথে সম্মন্ধ সূত্রে বিশ্ব সত্য।” স্ত্রীঃ আজিজা বানু, বোরজান বিবি, সাজেদা বানু, জোবেদা খাতুন, লবজান চৌধুরী।পুত্রঃ খান বাহাদুর দেওয়ান গণিউর রাজা চৌধুরী (১২৮৩-১৩৩৯ বাংলা), দেওয়ান হাসিনুর রাজা চৌধুরী (১২৮৫-১৩৫১ বাংলা), খান বাহাদুর দেওয়ান একলিমুর রাজা চৌধুরী (১২৯৬-১৩৭১ বাংলা) দেওয়ান আফতাবুর রাজা চৌধুরী (১৩০৩-১৩৬২ বাংলা)কন্যাঃ রওশন হুসেইন বানু, রওসন হাসান বানু, আলী হুসেইন বানু, রওশন আখতার বানু।মৃত্যু তারিখঃ ২২ অগ্রহায়ণ ১৩২৯ বাংলা, (৬ ডিসেম্বর ১৯২২ খ্রিঃ)কবরস্থানঃ লক্ষণশ্রী, সুনামগঞ্জ (মায়ের কবরের পাশে, যে কবরখানা মৃত্যুর পুর্বেই নিজে প্রস্তুত করেন। ) হাসন রাজা যাদুঘরে রক্ষিত কিছু জিনিষ-পত্রের ছবি।