সোমবার, ২৭ এপ্রিল, ২০০৯


মৌলভীবাজারের মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত এলাকা এখন দেশী-বিদেশী পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে। প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট মাধবকুণ্ড

জলপ্রপাত ইতিমধ্যেই দেশ-বিদেশের পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলায় মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতের অবস্থান। ‘গঙ্গাসাড়া’ নামক পাহাড়ি ছড়ায় প্রায় ২শ’ ফুট উপর থেকে যুগ যুগ ধরে গড়িয়ে পড়ছে জলরাশি।কয়েক যুগ ধরে মাধবকুণ্ড জণপ্রপাতের অঝরধারা প্রবহমান থাকলেও মাত্র সত্তরের দশকে দর্শনীয় স্থান হিসেবে এর পরিচিতি প্রকাশ পায়। মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত শুধু পর্যটকদেরই আকর্ষণীয় স্থান নয়, হিন্দু সমপ্রদায়ের কাছে তীর্থস্থান হিসেবেও পরিচিত। সেখানে অবস্থিত মাধবেশ্বর মন্দির ও শিব মন্দিরকে কেন্দ্র করে প্রতিবছর চৈত্রের মধুকৃষ্ণা ত্রয়োদশীতে স্নানে আসেন শত শত পুণ্যার্থী।মৌলভীবাজার শহর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরে বড়লেখা সদর এবং সেখান থেকে আরও ১৫ কিলোমিটার সমতল ও পাহাড়ি আঁকাবাঁকা পিচঢালা পথ পেরিয়ে পৌঁছতে হয় সেখানে। জলপ্রপাত এলাকায় রয়েছে মৌলভীবাজার জেলা পরিষদের ব্যবস্থাপনায় রেস্ট হাউস, পর্যটন কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপনায় রেস্তোরাঁ, কুণ্ডের জলধারার কাছাকাছি রয়েছে ভ্রমণের জন্য নৌকা ও ঘোড়াসহ নানা উপকরণ। এসবকে ঘিরে প্রতিদিন সেখানে বসে দেশী-বিদেশী পর্যটকদের মিলন মেলা।মৌলভীবাজারের বড়লেখায় স্থাপিত দেশের প্রথম ইকো-পার্ক মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত ও আশপাশ এলাকার চিত্র পাল্টে দিয়ে গড়ে তুলে দেশী-বিদেশী পর্যটক ও ভ্রমণপিপাসুদের আকর্ষণীয় স্থান। প্রাকৃতিক লীলাভূমি মৌলভীবাজারের পাহাড়ি জনপদ মাধবকুণ্ড পাহাড়ি জলকন্যা ও মুড়াইছড়া জলপ্রপাত নিয়ে প্রস্তাবিত দুটি ইকো-পার্ক প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের কাজ ইতিপূর্বে শেষ হয়েছে। প্রকল্পের উন্নয়ন কাজ শেষ হওয়ায় সৌন্দর্য ও ভ্রমণপিপাসু পর্যটকদের আকর্ষণ বেড়েছে। বেড়েছে পর্যটকদের উপস্থিতিও। দেশের প্রথম ইকো-পার্ক নির্মাণ প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ে ৫ কোটি ৬০ লাখ টাকার কাজ ২০০৫ সালের মাঝামাঝি সময়ে শেষ হওয়ায় দৃষ্টিনন্দন সাজে সেজেছে মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত ও আশপাশের উঁচু টিলা আর গহীন অরণ্য। এ প্রকল্প বাস-বায়িত হওয়ায় এলাকার জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের উদ্দেশ্য সফল হতে চলছে।কুলাউড়া উপজেলার কর্মধা ইউনিয়নের পাহাড়ি এলাকার অ্যাকোয়ার্ড ফরেস্টের লুতি টিলার পাদদেশে মুড়াইছড়া জলপ্রপাতের অবস্থান। মৌলভীবাজার শহর থেকে প্রায় ৫৫ কিলোমিটার সড়কপথে বরিরবাজার পৌঁছে ১২ কিলোমিটার কাঁচা রাস্তা পার হয়ে মুড়াইছাড়া বাজারের কাছ থেকে পাহাড়িপথে প্রায় আধা-কিলোমিটার যাওয়ার পর পাওয়া যাবে একটি ছড়া, ওই ছড়ার নাম মুড়াইছড়া। ওই ছড়ার পাদদেশে গড়িয়ে যাওয়া পানি, বালি কণা আর পাথরের উপর দিয়ে পায়ে হেঁটে যেতে হয় প্রায় ১ ঘণ্টার পাহাড়ি পথ। সেখানে গিয়ে পাওয়া যায় গভীর অরণ্যে সৃষ্ট মুড়াইছড়া জলপ্রপাতের ঝরনাধারা। মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত এলাকায় ইকো-পার্ক প্রকল্পের আওতায় ব্যাপক উন্নয়নমূলক কাজ হলেও মুড়াইছড়া জলপ্রপাতে পর্যটকদের যাতায়াতের জন্য সুষ্ঠু ও নিরাপদ যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় পর্যটকদের তেমন আগমন ঘটছে না। সেখানে যাওয়া-আসার জন্য রাস্তা নির্মাণ করে হোটেল-রেস্তোরাঁ ও পিকনিক স্পট স্থাপন করলে সরকার পর্যটন খাত থেকে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয় করতে পারবে বলে পর্যবেক্ষক মহল মনে করে। মাধবকুণ্ড ও মুড়াইছড়া এ দুটি জলপ্রপাত নিয়ে ইকো-পার্ক প্রকল্প চালু হলেও উন্নয়ন কাজে বরাদ্দকৃত অর্থের অধিকাংশই মাধবকুণ্ডের আশপাশে ব্যয় করা হয়েছে।প্রস্তাবিত ইকো-পার্ক প্রকল্প বাস-বায়নের জন্য ইকো-পার্ক এলাকায় পর্যটকদের ভ্রমণের সুবিধার্থে ভৌত অবকাঠামো নির্মাণের জন্য ৫ কোটি ৬০ লাখ টাকা প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়। সিলেট বিভাগীয় বন অফিস থেকে পাথারিয়া হিল রিজার্ভ ফরেস্টের ৬৫৪ দশমিক ৪২ একর জমির ওপর ইকো-পার্ক ও দেয়াল নির্মাণের নির্দেশ দেয়া হয়। ওই টাকা দিয়ে প্রস্তাবিত প্রকল্পগুলো বাস-বায়ন করে সৌন্দর্য বর্ধনের মধ্যে শেড, পর্যবেক্ষণ টাওয়ার, সমতল থেকে প্রায় ৪শ’ ফুট উঁচু পাহাড়ের চূড়া পর্যন্ত সিঁড়ি স্থাপনসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড আংশিক শেষ হয়েছে। বাকি কাজ সম্পন্ন করতে আরও অর্থের প্রয়োজন। তাই সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে ২০০৫ সালের আগস্ট মাসে আরও ৪ কোটি ১৫ লাখ টাকা চেয়ে মন্ত্রণালয়ে একটি প্রস্তাবপত্র পাঠানো হয়।২০০০ সালে পর্যটন কর্পোরেশন মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতের পাশে একটি রেস্তোরাঁ এবং মৌলভীবাজার জেলা পরিষদ ৩ বেডের একটি সাধারণ রেস্ট হাউস স্থাপন করে। কিন' ওই রেস্তোরাঁর খাদ্য তালিকায় অধিক মূল্য ও নিম্নমানের খাবার পরিবেশন করায় পর্যটকরা সেখানে খেতে অনীহা প্রকাশ করেন এবং যথেষ্ট নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা না থাকায় সেখানে নির্মিত রেস্ট হাউসে রাতযাপন ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করে থাকেন।