এম এচই কুলাউড়া বিডি ডট কম MHkulauraBD.blogger.com
হাজার একরেরও বেশি ভূমির মালিকানা নির্ধারণ করতে যৌথ জরিপ শুরু হবে শিগগিরই। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিনা রক্তপাতে বিডিআর গোয়াইনঘাটের পাদুয়া উদ্ধার করলেও শেষ পর্যন্ত তা ছেড়ে দিতে হয়। বর্তমান সরকার মতা গ্রহণের পর সীমান্তের বিরোধপূর্ণ ভূমির মালিকানা নির্ধারণের উদ্যোগ নেয়া হয়। যার ধারাবাহিকতায় গত দুই মাসে এসব বিষয় নিয়ে বিডিআরের দায়িত্বশীলরা সিলেট সীমান্তের একাধিক স্থানে বিএসএফের সঙ্গে পতাকা বৈঠকে মিলিত হন। এসব বৈঠকে ভূমি মালিকানার বিষয়ে বাংলাদেশের স্বপে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র উপস্থাপন করে বিডিআর। বিএসএফ এ সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় নথিপত্র দেখাতে ব্যর্থ হয়। তারপরও সীমান্তের শান্তি-শৃংখলার স্বার্থে বিরোধপূর্ণ ভূমির মালিকানা নির্ধারণে যৌথ জরিপের প্রস্তাব দেয় বিএসএফ। এ প্রস্তাব মেনে নেয় বিডিআর। বিডিআর-বিএসএফের একাধিক বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ভারত-বাংলাদেশের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে জরিপ কাজ পরিচালনা করা হবে। তবে কবে থেকে এ জরিপ কাজ শুরু হবে তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি।যৌথ জরিপের সিদ্ধান্ত নেয়ার পর থেকে সীমান্তে নতুন করে কিছুটা উত্তেজনা দেখা দেয়। জকিগঞ্জ সীমান্তে বিএসএফ কাঁটাতারের বেড়া দেয়ার চেষ্টা করলে বিডিআরের বাধার মুখে পিছু হটে। একইভাবে জৈন্তা সীমান্তে বাংলাদেশের মালিকানাধীন ভূমিতে ভারতীয় খাসিয়ারা বিএসএফের সহযোগিতায় চাষাবাদের চেষ্টা করলে বিডিআর বাধা দেয়। সিলেটের বিভিন্ন সীমান্তে ভারতের দখলে থাকা বাংলাদেশী ভূমির পরিমাণ ৩ হাজার একরের কম নয় বলে বিডিআর সূত্রে জানা গেছে। সিলেটের বিভিন্ন সীমান্তে ভারতের দখলে থাকা বাংলাদেশী ৩ হাজার একর ভূমির মধ্যে জকিগঞ্জের আমলসিদ সীমান্তেই রয়েছে ১ হাজার একর ভূমি। সুরমা-কুশিয়ারার মোহনায় জেগে ওঠা বাংলাদেশের ১শ’ একর ভূমি দীর্ঘদিন ধরে দখলে রেখেছে ভারত। নোম্যান্সল্যান্ডের এ পাড়ে থাকা এ ভূমি আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী বাংলাদেশের। যদিও দীর্ঘদিন ধরে তা ভারতের অপদখলে রয়েছে। এ ভূমি নিয়ে প্রায় সময় ভারতীয় বিএসএফের সঙ্গে বাংলাদেশীদের সংঘর্ষ হয়। বিডিআরের তথ্য মতে, সিলেটের বিভিন্ন সীমান্তে ভারতের অপদখলে থাকা ভূমির মধ্যে রয়েছে জকিগঞ্জ উপজেলার উত্তরকুল মৌজার ১৩৫২/১১ সীমান্ত খুঁটি থেকে ১৩৫২/১২ খুঁটি পর্যন্ত ১৬ একর, রসুলপুর ও খলাদাপনীয় মৌজার বিয়াবাইল বিওপির পাশে ১৩৪৩নং পিলার থেকে ১৩৪৭/১০নং পিলার পর্যন্ত ৭৮ দশমিক ৯১ একর, গজুকাটা মৌজার ১৩৫৭ থেকে ১৩৫৭/১৬নং পিলার পর্যন্ত ১ দশমিক ৪৪ একর, বিয়ানীবাজারের বড়গ্রাম মৌজার ১৩৫৯নং পিলারের কাছে ৩ একর, ছাতকের সোনালীচেলা বিওপির পাশে সামারগাঁও মৌজার ১২৩৯নং পিলার থেকে ১২৩৯/৪ এস পিলার পর্যন্ত ১২ দশমিক ৯০ একর, জকিগঞ্জের আমলসিদ সীমান্তে ১৩৫৪/১১ থেকে ১৩৫৫/১নং পিলার পর্যন্ত ৩০ একর, জৈন্তাপুর শ্রীপুর সীমান্তে ১২৮১ থেকে ১২৮৪নং পিলার পর্যন্ত ৪৯৩ একর, মৌলভীবাজারের বড়লেখার পালাতল মৌজার ১১৬৯/২ থেকে ১৩৭৩নং পিলার পর্যন্ত ৮৩০ একর, লাতু সীমান্তে ১৩৬৭/৫ থেকে ১৩৬৭/৯নং পিলার পর্যন্ত ৪৩ একর, কমলগঞ্জের খুরমা সীমান্তের পাশে ১৯০৪ থেকে ১৯০৫নং পিলার পর্যন্ত ২৫০ একর, কুলাউড়ার লাটিটিলা সীমান্তে ১৯৩৭ থেকে ১৪০৭নং পিলার পর্যন্ত ৫৯৯ একর, শ্রীমঙ্গলের সিন্দুরখান সীমান্তে ১৯৩৫নং পিলারের পাশে ৬৫০ একর, হবিগঞ্জের বালা সীমান্তে খোয়াইরচরে ১৯৬৩/৮ থেকে ১৯৬৩/১১নং পিলার পর্যন্ত ২০ একরসহ ৩ হাজার ৩৫০ দশমিক ১০ একর ভূমি। দীর্ঘদিন ধরে ভারতের অসহযোগিতার কারণে বন্ধ রয়েছে তিন নদীর যৌথ জরিপ কাজ। ফলে ভারতের বরাক এবং বাংলাদেশের সুরমা, কুশিয়ারা নদীর জরিপ প্রকল্প ঝুলে আছে। ২০০৭ সালের জুন মাসে দুই দেশের যৌথ নদী কমিশনের (জেআরসি) এ জরিপ শুরু হওয়ার কথা ছিল। জেআরসির যৌথ নদী জরিপ কার্যক্রম বাস্তবায়িত হলে ভারতের অপদখলে থাকা বাংলাদেশের প্রায় ৩ হাজার একর ভূমি উদ্ধারের পথ সুগম হবে বলে একটি সূত্রে জানা গেছে। সিলেটের বিভিন্ন সীমান্তে উভয় দেশের বিরোধপূর্ণ ভূমির অধিকাংশ স্থানেই রয়েছে নদী। জেআরসির যৌথ জরিপের মাধ্যমে বাংলাদেশ ভারতের অপদখলে থাকা ভূমি শনাক্ত করতে চায়। ২০০৫ সালের ডিসেম্বর মাসে শিলচরে অনুষ্ঠিত জেআরসির দু’দিনব্যাপী সভায় এ ব্যাপারে ঐকমত্যে পৌঁছে দু’দেশ। ভারতের অনাগ্রহের কারণে সিদ্ধান্ত গ্রহণের চার বছরেও যৌথ নদী জরিপ হয়নি।