বুধবার, ২৯ এপ্রিল, ২০০৯

শ্রীমঙ্গলে

শ্রীমঙ্গলে আনারসের উৎপাদন বাড়ছে না রক্ষণাবেক্ষন ও প্রক্রিয়াকরনের অভাবে
পচে যাচ্ছে লাখ লাখ টাকার আনারস ও লেবু

রুমীশ্রীমঙ্গলের আনারস বাগানগুলো নানান সমস্যায় জর্জরিত হয়ে পড়েছে। মৌলভীভাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার সাড়ে ১০ হাজার একর পাহাড়ি ভূমিতে আনারস চাষাবাদ হয়ে আসছে দীর্ঘদিন থেকে। কিন্তু প্রাচীন পদ্ধতির চাষাবাদের ফলে উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে না। এছাড়া পুরাতন বাগানগুলোতে জঙ্গলের সৃষ্টি হয়ে ক্রমশ উৎপাদন কমে যাচ্ছে। আধুনিক চাষাবাদ ও বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তিতে আনারস চাষ করলে উৎপাদন দ্বিগুন বৃদ্ধি পাবে বলে আনারস চাষীরা মনে করছেন। এছাড়া দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলের আনারস বাগান থেকে শ্রীমঙ্গল পর্যন্ত আনারস পৌছাতে পরিবহন খরচ হয় বেশি। পরিবহন খরচ দিয়ে চাষীদের হাতে কিছু থাকছে বলে আনারস চাষীদের অভিযোগ। অপরদিকে পরিবহন সংকটের কারণে যথাসময়ে আনারস আহরণ করা হয় না। ফলে বাগানে প্রচুর পরিমান আনারস পচে নষ্ট হয়। আনারস মৌসুমে প্রতিদিন ভোর ৫টা থেকে সকাল ৮টার মধ্যে আনারস বেচাকেনাহয় শ্রীমঙ্গল শহরের পুরানবাজার, নতুনবাজার দনি রোড, ষ্টেশন রোড, সাগরদিঘী রোডের উভয় পাশে। আনারসের পাশাপাশি কাগজী লেবু ও কাঠালের বাজারও একই সাথে বসে। উৎসুক জনতা ও বিদেশী ক্রেতাদের তখন খুব ভীড় থাকে।প্রকৃতিক সৌন্দর্য্যের লীলাভূমি শ্রীমঙ্গলে দেশি-বিদেশী পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিথ থাকে প্রায় পুরো বছর। মৌসুমে আনারস অনেকেই নিয়ে যান নিজেদের জন্য। এত কিছুর পরও আনারস বাগানে রয়েছে নানা সমস্যা। শ্রীমঙ্গলের আনারস প্রতি ১০০টি দাম ৩০০ টাকা থেকে দেড় হাজার টাকা পর্যন্ত- বিক্রি হয়ে থাকে। দামের তারতম্য হয় ছোট বড় সাইজ ও জাতের উপর। শ্রীমঙ্গলে বাগানগুলোর মধ্যে জলডুবি, ক্যালেন্ডার, চায়না, হিরামতি জাতের আনারস উৎপাদন হয়। এদের মধ্যে ছোট সাইজের কেউডস জাতের আনারস সাইজ ছোট হলেও খুবই সুস্বাদু দামেও সস্তা। এ আনারসের জুড়ি নেই। বিশেষজ্ঞদের মতে, পরিচর্যা ও যথাসময়ে আনারস আহরণ, পরিবহনের সংকট নিরসন, সর্বোপরি শ্রীমঙ্গলের আনারস চাষীরা যেমন হতো লাভবান তেমনি সরকারও পেত মুনাফার অংশ। শ্রীমঙ্গলের আনারস, লেবু, কাঁঠালের বিদেশেও যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে। অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে আনারস রফতানির মাধ্যমে সরকারের মোটা অংকের রাজস্ব আয় হতে পারে। আনারস ও লেবু জেলী, আচার ও জুস ফ্যাক্টরির মাধ্যমে নষ্টের হাত থেকে মৌসুমী ফল রা করতে প্রক্রিয়াজাত করলে লাভের অংশ যেমন বৃদ্ধি পাবে তেমনি বিশাল বেকার জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান হতে পারে। আনারস প্রক্রিয়াকরণে কোনো ব্যবস্থা নেই। শ্রীমঙ্গলে নেই কোনো আচার কিংবা জুস ফ্যাক্টরি। ফলে প্রতিবছর শ্রীমঙ্গলের কোটি কোটি টাকার সুস্বাদু আনারস পচে নষ্ট হয়। বিশেষজ্ঞরা জানান, আনারস শুধু সুস্বাদু ফলই নয়, এর রয়েছে নানা উপকারিতা। এটি ভেষজ ফল। আনারসের রস ক্যান্সার উপশম করে থাকে। বিদেশী বিশেষজ্ঞরা একমত প্রকাশ করে বলেন, আনারসে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন এ ও সি রয়েছে। কৃমিনাশক হিসাবেও আনারস খুব কার্যকর ভূমিকা রাখে। আনারস বাগানের সমস্যা নিরসনে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে প্রক্রিয়াজাত করণ ও জুস ফ্যাক্টরি স্থাপনের ব্যবস্থা গ্রহণ করলে আনারস চাষীরা হবে উৎসাহী। এতে আনারস চাষী ও সরকার উভয়ই হবে লাভবান। যা জাতীয় অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে বলে অভিজ্ঞমহল মনে করেন।