বৃহস্পতিবার, ১৬ জুলাই, ২০০৯

কুলাউড়া ডট কম নিঃশ্বেষ হয়ে যাচ্ছে লাউয়াছড়ার জীব বৈচিত্র দেশের পূর্বাঞ্চলের সবচেয়ে সুন্দর প্রাকৃতিক পরিবেশ সমৃদ্ধ জীববৈচিত্রময় একমাত্র বন গবেষণা কেন্দ্


নিঃশ্বেষ হয়ে যাচ্ছে লাউয়াছড়ার জীব বৈচিত্র দেশের পূর্বাঞ্চলের সবচেয়ে সুন্দর প্রাকৃতিক পরিবেশ সমৃদ্ধ জীববৈচিত্রময় একমাত্র বন গবেষণা কেন্দ্র সম্বলিত লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান। কমলগঞ্জের সংরতি এই বনাঞ্চলের সবুজ নিসর্গ ক্রমেই ধ্বংস করা হচ্ছে। বিরামহীনভাবে এই নিসর্গ থেকে মূল্যবান প্রজাতির বৃ নিধনের ফলে বনাঞ্চলসহ জাতীয় উদ্যানে অবস্থানরত জীব বৈচিত্র নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে। পশু-পাখিরা হারিয়ে ফেলছে নির্ঝঞ্জাট জীবন যাপনের পরিবেশ।

জঙ্গলের দূর্লভ প্রাণীগুলো জনপদে ছুটে এসে অধিকাংশ েেত্রই মারা যাচ্ছে। বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে কাঠ পাচার কিছুটা কমলেও সম্প্রতি এটি মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। প্রভাবশালী রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় এক শ্রেনীর অসাধু বন কর্মকর্তার যোগসাজষে বন ভকরা প্রতিনিয়তই লুটপাট করে নিয়ে যাচ্ছে সবুজ এই প্রকৃতির সবটুকু নিসর্গ। সংরতি বনের গাছপালা উজার ও পাচার করে অসাধু বন কর্মকর্তা ও পাচারকারীরা আর্থিকভাবে বিত্তশালী হলেও তারা সবার চোখের সামনেই নিঃস্ব করে দিচ্ছে প্রকৃতিকে। সবুজ প্রকৃতি ঘেরা অত্যন্ত সুন্দর পরিচ্ছন্ন লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান দেশ বিদেশের পর্যটকদের কাছে সমাধিত। লাউয়াছড়া ছাড়াও এখানে হাজার হাজার একর সংরতি বনাঞ্চল রয়েছে। বর্তমানে মৌলভীবাজার জেলার এই বন ক্রমাুয়ে বিপন্ন হচ্ছে। নিঃশষ হচ্ছে জীব বৈচিত্র। সংরতি বনের বিশাল এলাকা থেকে সেগুনকাঠসহ বিরল প্রজাতির মুল্যবান গাছগাছালি চোরাই কাঠ পাচারকারীরা হরদম পাচার করছে। প্রাকৃতিক পরিবেশ ও সংরতি বনাঞ্চল ধ্বংস হতে হতে এখন পুরোপুরি নিঃশষ হওয়ার উপক্রম। বনাঞ্চল ও আশপাশ এলাকার বেকার লোকজন ছাড়াও কিছু সংখ্যক নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ কাঠ পাচার করাকে পেশা হিসাবে গ্রহণ করেছেন। আগের মতো এখন আর নেই লাউয়াছড়ায় সুবজের সমারোহ। শুধু মাত্র কমলগঞ্জ-শ্রীমঙ্গল সড়কের পাশে কিছু গাছ থাকলেও ভিতর একে বারেই ফাকা।১৯২৭ সালের বন আইনের আওতায় ১৯৯৬ সালে গেজেট নোটিফিকেশনের মাধ্যমে প্রতিষ্টা করা হয়েছিল এই জাতীয় উদ্যান। ১২৫০ হেক্টর জমিতে পশ্চিম ভানুগাছের রিজার্ভ ফরেস্টের অংশ বিশেষ নিয়ে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান গঠিত হয়েছে। উদ্যান প্রতিষ্টার এক বছরের মাথায় ১৯৯৭ সালে মার্কিন অক্সিডেন্টাল কোম্পানী পার্শ্ববর্তী মাগুরছড়ায় গ্যাস উত্তোলনকালে অগ্নিকান্ডে তবিত হয় বন, মাটি, মানুষ ও প্রাণীজগতের। পরবর্তী ২০০৮ সালে শেভরনের ভূ-তাত্ত্বিক জরিপ কার্যক্রমে মাগুরছড়ার নিকটবর্তী লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান ও আশপাশ এলাকায় মাটিতে ফাটল দেখা দেয় এবং বন্য প্রাণীরা ছোটাছুটি শুরু করে। বনাঞ্চল এলাকায় বেকারত্ব, রাজনৈতিক দলের প্রভাব, কৃষি জমির স¤প্রসারন, বসত বাড়ি স্থাপনা, জ্বালানী হিসাবে কাঠের ব্যাপক ব্যবহার, বন বিভাগের জনবল কম, চোরাই কাঠ পাচারকারীর সাথে অসাধু বনকর্মকর্তা ও পুলিশের যোগসাজস সর্বোপরি অসচেতনতার কারণেই কমলগঞ্জের সংরতি বনাঞ্চল উজাড়ের কারন বলে স্থানীয় সচেতন মহলের ধারনা। বনাঞ্চল এলাকার স্থানীয় খাসিয়া স¤প্রদায়ের লোকজন জানান, কমলগঞ্জের সংরতি বনাঞ্চল থেকে কাঠ পাচারের ফলে এখানকার বিরল প্রজাতির বৃ ও প্রাণী সমূহ বিলুপ্ত হওয়ার অপোয়। মাগুরছড়া খাসিয়া পুঞ্জির হেড মিঃ জিডিসন প্রধান সুচিয়ান বলেন, ‘বিগত বছর শেভরনের কার্যক্রমের সময় এখানে বন্য প্রাণীর তৎপরতা দেখা যায়নি। তাছাড়া বনাঞ্চলের বাঁশে বাঁশে ফুল আসায় ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে এখানকার বাঁশঝাড়। সংরতি এই বনাঞ্চলে বহু প্রজাতির জীব-জন্তু বন থেকে খাদ্য সংগ্রহ করে ও বনে আশ্রয় নেয় এবং বনেই বংশ বিস্তার করে। কিন্তু বনাঞ্চল ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় বন্য প্রাণীরা ও হুমকীর মুখে রয়েছে।’ বনাঞ্চল ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় লোকালয়ে বেরিয়ে আসছে বন্য প্রাণীরা। লোকালয়ে বেরিয়ে আসা এসব বন্য প্রাণী বিভিন্ন সময়ে মারা যাচ্ছে। গত কয়েক বছরে জঙ্গলের শতাধিক প্রাণীর প্রাণ হারানোর অভিযোগ রয়েছে। এরমধ্যে বিগত ২০০৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে শ্রীমঙ্গল শহরতলীর হবিগঞ্জ রোডের ভৈরবতলী নামক স্থানে গাড়ির নিচে চাপা পড়ে ৪ ফুট লম্বা ২৬ কেজি ওজনের একটি বাঘ মারা যায়। একই বছরে নভেম্বর মাসে শ্রীমঙ্গল শীতেশ বাবুর ফিসারীতে পাহাড়ারত দুটি কুকুরের কাছে প্রাণ হারায় ৪ ফুট লম্বা ২০ কেজি ওজনের আরেকটি বাঘ। ২০০৫ সালের জানুয়ারী মাসে লাউয়াছড়া ন্যাশনাল পার্ক থেকে বেরিয়ে আসা ১৩ ফুট লম্বা প্রায় ১০০ কেজি ওজনের ১ টি ওজগর সাপ জনপদে চলে আসলে চা শ্রমিকরা দড়ি দিয়ে বেধে সাপটিকে ৪ দিন আটকে রাখে। যার প্রতিবেদন তৎকালীন সময়ে বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল। ২০০৫ সালের ২৩ জানুয়ারী কমলগঞ্জের খাসিয়াদের হাতে ধরা পড়ে বিরল প্রজাতির একটি ধূমকল, একই বছরের নভেম্বর মাসে লাউয়াছড়ার গভীর জঙ্গল থেকে ৩১ কেজি ওজনের ৩ ফুট লম্বা মেছো বাঘ বেরিয়ে আসলে ২ টি কুকুরের হাতে প্রাণ হারায়। ৭ নভেম্বর তারিখে সাড়ে ৩ ফুট লম্বা আরেকটি মেছো বাঘ জঙ্গল থেকে বেরিয়ে আসলে লোকজন তাকে পিটিয়ে হত্যা করে। একই বছরের জানুয়ারী মাসে শ্রীমঙ্গল উপজেলার ভৈরববাজারের লামুয়া নামক স্থানে গাড়ীর ধাক্কায় মারা যায় ৩ ফুট লম্বা একটি গন্ধগোকুল। এই বছরে ডিসেম্বর মাসে খাদ্যের অভাবে পাহাড় থেকে বেরিয়ে আসা বিরল প্রজাতির ১ টি হনুমান জনতার হাতে ধরা পড়ে। ২১ ডিসেম্বর তারিখে শ্রীমঙ্গল এলাকায় আহত অবস্থায় ধরা পড়ে ১ টি বন মানুষ। ২০০৮ সালের ১৩ এপ্রিল পাহাড় থেকে বেরিয়ে আসা একটি লজ্জাবতী বানর কমলগঞ্জ উপজেলার ভানুগাছে ধরা পড়ে জনতার হতে। পরে বানরটিকে বন বিভাগের সহায়তায় পৌছে দেয়া হয় শ্রীমঙ্গলের শীতেষ বাবুর চিড়িয়াখানায়। পরিবেশ সংরণবিদ সীতেশ রঞ্জন দেব জানান, গত এক মাসে কমলগঞ্জ, শ্রীমঙ্গল ও মৌলভীবাজারের বিভিন্ন এলাকা থেকে আহত অবস্থায় বিরল প্রজাতির একটি মেছো বাঘ, একটি সোনালী বাঘ, একটি গন্ধ গকুল ও একটি ধনেশ পাখি উদ্ধার করে তার পারিবারিক চিড়িয়াখানায় পাঠালে সেখানে সেবা প্রদান করা হয়। স¤প্রতি এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহে বনাঞ্চল থেকে বেরিয়ে আসা একটি মায়া হরিণের মৃত্যু হয় শমশেরনগরে। এভাবেই প্রতিনিয়ত জঙ্গল থেকে ছুটে আসা প্রাণীগুলো মানুষের হাতে কখনও বা যানবাহনের নিচে, আবার কখনও অপর কোন প্রাণীর হাতে প্রাণ হারাচ্ছে। সরকার বিরল প্রজাতির পশু পাখীর আবাসস্থল এই লাউয়াছড়ার জৈব বৈচিত্র রায় লাউয়াছড়া ন্যাশনাল পার্কে সকল প্রকার আহরন নিষিদ্দ করেছে। কিন্তু কিছুতেই তা মানা হচ্ছে না। পার্কের ভেতর দিয়ে রয়েছে বিভিন্ন লেবু, আনারস বাগান ও পান পুঞ্জির রাস্তা, যার জন্য পশু পাখীর নিস্তব্ধ পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে। তবে বন কর্মীরা কাঠ পাচারে জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করে রাজকান্দি রেঞ্জের দায়িত্বরত কর্মকর্তা শেখর রায় বলেন, জনবল কম থাকা সত্ত্বেও তারা যথাসাধ্য বনাঞ্চল রায় দায়িত্ব পালন করছেন। প্রতিদিনই কোন না কোন স্থান থেকে গাড়ীসহ কাঠ আটক করা হচ্ছে।লাউয়াছড়া থেকে প্রকাশ্যে পাচার করা হচ্ছে মূল্যবান বাঁশকমলগঞ্জ উপজেলার লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান থেকে এখন গাছের পাশাপাশি প্রকাশ্যে পাচার করা হচ্ছে মূল্যবান বিভিন্ন প্রাজাতির বাঁশ। বিটের সামনে দিয়ে প্রতিদিন মূলিবাঁশ পাচার করা এখন এক শ্রেণীর মানুষের পেশা হয়ে দাঁড়িয়েছে। নেপথ্যে থেকে মহিলাদের দ্বারা প্রতিনিয়ত সংরতি বনাঞ্চলের বাঁশ মহাল থেকে আটা বেঁধে মাথায় করে সারি বদ্ধভাবে শ্রীমঙ্গলের বাজারে নিয়ে তা বিক্রি করা হচ্ছে। শ্রীমঙ্গল উপজেলার বিরাইমপুর (আউট সিগন্যালসহ) সহ আশপাশ এলাকার অধিকাংশ মহিলাদের দিয়ে প্রকাশ্য দিবালোকে বাঁশ পাচারকারী সিন্ডিকেট চক্র এভাবে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। বিট অফিসের আশপাশে বনাঞ্চলের মধ্যদিয়ে সিএন্ডবি রোডের উভয় পাশে ৭/৮ জনের সংঘবদ্ধ যুবককে দাঁড়িয়ে থেকে বনের ছোট ছোট রাস্তা দিয়ে বাঁশ পাচারের নেতৃত্ব দিতে দেখা গেছে। এতে বনাঞ্চল ও জীব বৈচিত্রের ব্যাপক তি সাধিত হচ্ছে।জানা যায়, বনাঞ্চলে বানর জাতীয় প্রাণী জীবিকা নির্বাহে মূলিবাঁশের কচি পাতা খেয়ে থাকে। কিন্তু একদিকে যেমন মূলিবাঁেশ ফুল এসে বাঁশঝাড় ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে, অন্যদিকে পাহাড়ি এলাকা থেকে প্রকাশ্য দিবালোকে বাঁশ কেটে পাচার করার ফলে সংরতি বনাঞ্চলের বাঁশ মহাল প্রায় উজাড় হচ্ছে। এতে বানর মূলি বাঁশের কচি পাতার খাবার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। প্রতিদিন মহিলারা লাউয়াছড়া বনের ভিতর থেকে মূলি সহ বিভিন্ন প্রজাতির বাঁশ কেটে তাদের মাথায় আটা আটা করে তা বন থেকে বের করে নিয়ে আসছে। এসব বাঁশ পাচারের নেপথ্যে আছেন স্থানীয় প্রভাবশালী একাধিক চক্র। যারা মহিলাদের বাঁশ পাচারের কাজে ব্যবহার করে থাকে। গাছের পাশাপাশি বাঁশ পাচারের ফলে ক্রমেই বিরান ভূমিতে পরিনত হচ্ছে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান। সুবজ প্রকৃতির একচ্ছত্র আধিপত্য নিয়ে রাজত্ব করা লাউয়াছড়া এখন জিম্মি গাছ ও বাঁশ পাচারকারীদের নিকট। তাদের হিংস্র থাবায নিঃশ্বেষ হয়ে সুবজ লাউয়াছড়া। উপজেলার ধলাই নদীকে ব্যবহার করা হয়ে চোরাই বাঁশ পাচারের জন্য। কমলগঞ্জ উপজেলার রাজকান্দি রেঞ্জ অফিসের পিছন দিয়ে ধলাই নদী বযে গেলেও বন বিভাগের অসাধু কর্মকর্তা- কর্মচারীরা পানি পথে বাঁশ পাচার রোধ করতে কোন পদপে গ্রহন করছেন না। যে কারনে পানি পথে নিরাপদেই লাউয়াছড়া সহ আদমপুর বনবিট, কুমরা, কামারছড়া বিটের বাঁশ পাচার হয়ে আসছে। এছাড়া ঠেলাগাড়ি, পিকআপ ও ট্রাক যোগে বন বিভাগরে অসাধু কর্মকতা-কর্মচারীদের চোখের সামন দিয়েই নিয়ে যাওয়া হয় বনাঞ্চলের মূল্যবান বাঁশ। সর্বোপরি কমলগঞ্জের ভানুগাছ ও শমশেরনগর রেলস্টেশন এবং শ্রীমঙ্গল রেলওয়ে ষ্টেশন থেকে যাত্রীবাহী ট্রেনের বগীতে করে বনাঞ্চল থেকে পাচার করা এসব চোরাই বাঁশ পাচার করা হচ্ছে। বনাঞ্চল এলাকার সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সংরতি বনাঞ্চলের গাছ ও বাঁশ পাচারে বন বিভাগ এবং ওয়াইল্ড লাইফের কতিপয় অসাধূ কর্মকর্তা কর্মচারি জড়িত। উদ্ধর্তন কর্তৃপ কোন অপারেশন করার ঘোষনা দিলে এর আগাম সংবাদ দিয়ে পাচারকারীদের সতর্ক করে দেয়া হয়। যাত্রীবাহী বগিতে বাঁশ বা কাঠ উঠানোর ফলে কোন যাত্রীর প্রতিবাদ করার সাহস নেই। ষ্টেশন থেকে ট্রেনে বাঁশ পাচারে মাষ্টারের সহযোগীতা পাওয়া না গেলে প্রাণ নাশের হুমকি প্রদান করা হয়। ভানুগাছ ষ্টেশনের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, এই ষ্টেশন থেকে নিয়মিত চোরাই বাঁশ ও কাঠ বিভিন্ন ট্রেনের বগীতে তুলে পাচার করা হয়। তাদের সাথে প্রতিবাদ করেও কোন লাভ হয়না, উপরন্ত বিভিন্ন হুমকি প্রদান করা হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ষ্টেশন মাষ্টার বলেন, ইজ্জতের ভয়ে এখন চাকুরী ছেড়ে দেয়া ছাড়া আর কোন উপায় নেই। সচেতন মহল এখনই লাউয়াছড়া থেকে গাছ ও বাঁশ পাচার বন্ধ করতে সংশ্লিষ্টদের হস্তপে কামনা করেছেন।লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে বখাটেদের উৎপাত \ অপহরন হচেছ মহিলা পর্যটক \ বাড়ছে ছিনতাইদেশ-বিদেশে পরিচিত কমলগঞ্জ উপজেলার লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান এখন বখাটেদের নিরাপদ আস্তানায় পরিনত হয়েছে। উৎপাতে অতিষ্ট হবার কারনে পর্যটক সংখ্যা কমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। প্রায় দিনই স্থানীয় কিছু বখাটে যুবক কর্তৃক মহিলা পর্যটক অপহরন হবার অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। পাশাপাশি এখন বন প্রহরী কর্তৃকও উত্যক্ত হচ্ছেন মহিলা পর্যটকরা। মহিলা পর্যটকদের সাথে আসা পুরুষদের গভীর বনাঞ্চলের ভিতর মারধর করে অপহরন করা হচ্ছে মহিলাদের। এছাড়া নিয়মিত মোবাইল ফোন, মানি ব্যাগসহ অন্যান্য সামগ্রী ছিনিয়ে নেয়া হচ্ছে পর্যটকদের। গত সপ্তাহে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে অপরিচিত বখাটে ও বন প্রহরী দ্বারা মহিলা পর্যটক অপহরন এবং উত্যক্ত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায এক বন প্রহরীকে সাময়িক ভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। চলতি বছরের মার্চ মাসে জাতীয় উদ্যান সহ ব্যবস্থাপনা কমিটি পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য পুলিশি নিরাপত্তা চেয়ে কমলগঞ্জ থানায আবেদন করা হলেও এখনও পর্যন্ত কোন পুলিশি টহলের ব্যবস্থা করা হয়নি।সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, গত ১৯ জুন দুপুরে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে এক সাথে ঘুরতে আসেন চার জন যুবক যুবতী। তারা জাতীয় উদ্যানের ৩ কিলোমিটারের ট্রেইল দিযে হাটতে হাটতে এক সময বনের গভীরে প্রবেশ করেন। এ সময় মৌলভীবাজার বড়কাপনের যুবক কামাল ও কমলগঞ্জের ব্রাহ্মনউষারের যুবতী জ্যোৎনা তাদের সহযোগী বড়কাপনের তাজুল ইসলাম ও পতনউষারের শীলা বেগম অনেকটা দুরত্বে অবস্থান নিয়ে হাটতে থাকেন। তখন হঠাৎ করে কয়েকজন বখাটে জোৎনাকে তুলে নিতে চায়। এ সময কামাল তাদের নিবৃত করতে চাইলে বখাটেরা তাকে মারধর করে জ্যোৎনাকে ছিনিয়ে নিয়ে গভীর বনাঞ্চলের ভিতর চলে যায়। সাথে সাথে কামাল পিছনে দৌড়ে এসে সহযোগীদের নিয়ে জাতীয় উদ্যানের টহল দল সহ স্থানীয় মানুষকে বিষয়টি অবহিত করে। এ সময় কমলগঞ্জ থানার পুলিশকেও বিষয়টি অবহিত করা হয়। কিন্তু অনেক খোজাখুজির পরও মেয়েটির সন্ধান আর পাওয়া যায়্িন। পরবর্তীতে কামালের মাধ্যমে জোৎনার বাড়ীতে খবর নিযে জানা যায়, সে বাড়ীতে চলে গেছে। কমলগঞ্জ থানা পুলিশ ও আইপ্যাক সূত্রে জানা যায়, অপহৃত মহিলা পর্যটক তাদেরকে জানিয়েছে যে, বখাটে যুবক তার কোন তি করেনি। সে তাকে বনের গভীর পথ দিয়ে কমলগঞ্জ-শ্রীমঙ্গল সড়কে তুলে দেয়। এর পর সে তার বাড়ী চলে যায়। বেশ কয়েক মাস ধরে স্থানীয় কিছু বখাটেরা লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে এসে বিশেষ করে সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্র ও শনিবার পর্যটকদের ভিড়ের মাঝে উৎপাত শুরু করে। এছাড়া সুযোগ পেলে মোবাইল ফোন, নগদ অর্থ এমনকি বিভিন্ন সামগ্রী ছিনিয়ে নেয়। বিভিন্ন সময় অপরাধ মূলক ঘটনা বৃদ্ধি পাওয়ায় গত ২৫ ফেব্র“য়ারী সহ-ব্যবস্থাপনা কমিটির ২৫ তম সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক ৩ মার্চ কমলগঞ্জ থানার ওসির নিকট পুলিশি নিরাপত্তা চেয়ে আবেদন করা হয়। কিন্ত এখন পর্যন্ত নিয়মিত কোন পুলিশ টহলের ব্যবস্থা করা হয়নি। এছাড়া গত ২১ জুন অনুরুপ ভাবে দুজন যুবক যুবতী লাউয়াছড়ার ভিতর একটি ছড়ায় গোসল করার সময় বন বিভাগের দুজন প্রহরী তাদের কাপড় নিযে যায়। এ সময় তারা প্রতিবাদ করলে বন বিভাগরে প্রহরীরা পর্যটকদের সাথে খারাপ আচরন করে। সবকিছু মিলে আতংকের মাঝে রয়েছেন লাউয়াছড়ায় আসা পর্যটকরা। বিশেষ করে মহিলা পর্যটকরা সবচেযে বেশী অজানা আতংকের মাঝে থাকেন। এভাবে মহিলা পর্যটক অপহরন ও ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটতে থাকলে কমে যাবে লাউয়াছড়ায পর্যটকের সংখ্যা। অপরদিকে ২১ জুনের ঘটনায় বানেশ্বর নামক এক বন প্রহরীকে সাময়িক ভাব বহিস্কার করেছে বন বিভাগ। এছাড়া আইপ্যাক টহল দলের সদস্যরা এখন থেকে নিয়মিত গাছ পাহারার পাশাপাশি পর্যটকদের নিরাপত্তার কাজও করবে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরূপ লীলাভূমি কমলগঞ্জের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে স¤প্রতি পর্যটক সংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে শুরু হয়েছে ছিনতাই ও অপহরন কারীদের তৎপরতা। বিশ্বের বিলুপ্ত প্রায় জীব বৈচিত্র্যের শেষ আশ্রয়স্থল লাউয়াছড়া হলো প্রকৃতি প্রেমীদের জন্য একটি আকর্ষনীয় স্থান। এখানকার সবুজ প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করতে প্রতিদিন ভ্রমনে আসেন দেশী-বিদেশী হাজারো পর্যটক। কিন্তু যেভাবে শুরু হয়েছে বিভিন্ন অপরাধ মূলক কাজ তাতে করে হারিয়ে যাবে এ বনাঞ্চলের ঐতিহ্য। তাই কর্তৃপকে এ ব্যাপারে এখনই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে আহবান জানিয়েছেন সচেতন মহল।